যশোরে একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে সন্দেহে প্রেমিকাকে খুন
স্টাফ রিপোর্টারঃ যশোরের ঝিকরগাছার বহুল আলোচিত সুমাইয়া হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এঘটনায় নিহত সুমাইয়ার পরকীয়া প্রেমিক আলামিন বাপ্পি ও তার চাচা জুয়েলকে গ্রেফতার করেছে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের চৌকশ দল।
সোমবার (৪ এপ্রিল) ভোররাতে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানাধীন বংশীপুর এলাকায় অভিযান করে আলামিন বাপ্পীকে গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন>>>নরসিংদীর পলাশে ৫ জনকে কুপিয়ে ১১ লাখ টাকা লুট
তার দেয়া তথ্যমতে জুয়েলকেও গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া গত পহেলা এপ্রিল বাপ্পির মা আঞ্জুয়ারা বেগমকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পি হত্যার দায় স্বীকার করেছে। বাপ্পি জানিয়েছে একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে এমন সন্দেহে তার প্রেমিকা, এক সন্তানের জননী সুমাইয়াকে হাত পায়ের রগ কেটে ও জবাই করে হত্যা করে সে।
পুলিশ জানায়, গত ২৫ মার্চ ঝিকরগাছা থানাধীন চাঁপাতলা সাকিনস্থ ঝিনুকদাহ মাঠে অজ্ঞাত এক মহিলার গলাকাটা লাশ পাওয়ার সংবাদ পেয়ে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ লাশটিকে উদ্ধার করে এবং পরিচয় সনাক্ত করে।
নিহতের নাম সুমাইয়া আক্তার (২৭)। তার পিতার নাম রেজাউল ইসলাম। সে শার্শা থানার বুরুজবাগান গ্রামের আইয়ুব হোসেনের স্ত্রী। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের পিতা রেজাউল বাদী হয়ে নিহত সুমাইয়ার প্রেমিক বাপ্পিকে সন্দেহ করে মামলা দায়ের করেন।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হওয়ায় ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশ ও ডিবিকে কঠোর দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এঘটনায় গত পহেলা এপ্রিল ডিবি ও থানা পুলিশ যৌথ অভিযানে ঘটনায় জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত আসামী আঞ্জুয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসামি আলামিন বাপ্পির রক্তমাখা জামা আঞ্জু আরা বেগম কর্তৃক পুড়িয়ে ফেলার অবশিষ্ট অংশ উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
সোমবার ভোররাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মেজবাহুর রহমান ও ডিবির এসআই শামীমের নেতৃত্বে একটি একটি চৌকশ টিম সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানাধীন বংশীপুর এলাকায় অভিযান করে। এসময় চোরাই পথে সীমান্তবর্তী ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রধান আসামী আলামিন বাপ্পিকে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পি হত্যার দায় স্বীকার করে এবং তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যার মিশনে ব্যবহৃত মটরসাইকেলটি লুকিয়ে রাখার দায়ে তার চাচা জুয়েলকে আটক করে মটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুটি যে দোকান থেকে কেনা হয়েছিল সেই দোকান হতে চাকুর বক্স উদ্ধারসহ ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়।
যশোরে সন্দেহে প্রেমিকাকে খুন
পুলিশ জনায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রধান আসামী বাপ্পি জানিয়েছে, ২০১২ সাল থেকে সুমাইয়ার সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ২০১৫ সালে সে বিদেশে চলে গেলে সুমাইয়ার বিয়ে হয় শার্শা থানার লক্ষনপুর সাকিনের আইয়ুব হেসেনের সাথে। সেই ঘরে তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
২০১৮ সালে বাপ্পি দেশে ফিরে সুমাইয়ার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে পুনরায় যোগাযোগ স্থাপন করে। এক পর্যায়ে এক বছর আগে সুমাইয়া ঘর সংসার ছেড়ে বাপ্পির নিকট চলে আসে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হয়ে ফিরে গেলেও পুনরায় চলে এসে স্বামী স্ত্রীর মত যশোর শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে বাপ্পি ও সুমাইয়া।
বাপ্পি দাবি করে তার সাথে সুমাইয়া মাদকাসক্ত হয়ে একাধিক ছেলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। যে কারনে রাগে ক্ষোভে সুমাইয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে। গত ২৪ মার্চ সুমাইয়াকে ডেকে নিয়ে বেনাপোল পুটখালী এলাকায় গিয়ে ফেনসিডিল সেবন করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে রাত অনুমান ১০টার দিকে চাঁপাতলা ঝিনুকদাহ মাঠে নিয়ে হাতের রগ কেটে ও জবাই করে হত্যা করে সুমাইয়াকে।
যশোরে সন্দেহে প্রেমিকাকে খুন
রক্তমাখা কাপড় খুলে বাপ্পির মা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে, এবং বাপ্পির চাচা মোটরসাইকেলটি লুকিয়ে রাখে। বাপ্পি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়, পরে ফিরে আসলে সোমবার ভোরে তাকে আটক করা হয়।